সোনার লাগামহীন দাম বাড়ার নেপথ্যে যে কারণ

অতীতকাল থেকেই সোনার বাজার সবসময় চড়া ছিল। এখনো আছে। তবে চলতি বছরে সারা পৃথিবী জুড়ে সোনার দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। এতে ভেঙে গেছে সব রেকর্ড। নিকট বা দূর অতীতে কোনো বছর সোনার বাজারের এমন অবস্থা দেখা যায়নি। সোনার দামের সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং অর্থনীতির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যদি ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা শুরু হয় এবং তার সঙ্গে যোগ হয় অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই স্বর্ণের বাজারও চড়তে থাকে। তবে চলতি বছর যে হারে সোনার দাম বেড়েছে, তার জন্য আরো একাধিক কারণ দায়ী বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সোনার বাজার বিশ্লেষকরা।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের কারণ অনুসন্ধানে নেমেছিল। ‘হু ইস বিহাইন্ড গোল্ড’স ক্রেজি রাইস’ বা ‘সোনার লাগামহীন দাম বাড়ার নেপথ্যে কে’ নামের একটি তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেছে ব্লুমবার্গ।

এই অনুসন্ধানে সোনার দাম বাড়ার প্রথম কারণ হিসেবে এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে শাস্তি দিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোর রুশ অর্থ ও সম্পদ জব্দ করার ব্যাপারটি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ ছিল রাশিয়ার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর এসব অর্থ ও সম্পদ জব্দ করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলো। রাশিয়ার জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

এসব পদক্ষেপের জেরে বিশ্ব অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহে সত্যিকার অর্থেই বিপদঘণ্টা বেজে ওঠে এবং শুরু হয় বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রধান বাহন ডলারের মানে অস্থিতিশীলতা। বস্তুত, ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত কখনো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে ডলারের দাম, কখনো বা কমছে।

এতে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো পড়েছে সমস্যায়। সম্ভাব্য মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় তাই ২০২২ সাল থেকেই অধিক হারে সোনা কিনছে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ বিশ্বে যেহেতু সোনার মোট পরিমাণ সীমিত, ফলে সোনার মজুত থাকলে তার বিপরীতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এতে সোনার চাহিদা বাড়ছে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দামও।

সোনার দাম বাড়ার দ্বিতীয় কারণটি হলো চীন। করোনা মহামারি ও তার জেরে মাসের পর মাস ধরে শিল্প ও কৃষি উৎপাদনের স্থবিরতা দেশটিকে ব্যাপক মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিতে ফেলেছিল। এই ঝুঁকি সামলাতে চিনের ধনী-শিল্পপতিদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের মধ্যেও ২০২৪ সালে সোনা কেনার ধুম পড়ে। ব্লুমবার্গের ধারনা মতে, বিশ্বজুড়ে সোনার বাজারের অতিমাত্রায় চাঙাভাবের আসল ও প্রধান কারণ এ দুটি।