পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ হলেও এর সম্ভাবনা অসীম। বাংলাদেশের রয়েছে বিস্তৃত সমুদ্রসীমা, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য একটি বিশাল সুযোগ হতে পারে। যদি বাংলাদেশ এই সমুদ্রকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে, তবে এটি এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, এবং দেশের অর্থনৈতিক চিত্র বদলে যেতে পারে। তবে প্রশ্ন হলো, এই পরিবর্তনটি কীভাবে সম্ভব? কিভাবে বাংলাদেশ সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতি বা ব্লু ইকোনমি গড়ে তুলবে? এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন আরিফ হাসান তার প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশের আয়তন মাত্র ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার, যা একদিকে ছোট হলেও সম্ভাবনায় ভরপুর। সুজলা-সোফলা, শস্যশ্যামলা এই কৃষি প্রধান দেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিশাল সুযোগ রয়েছে, যার অন্যতম প্রধান উৎস হলো দেশের বিস্তৃত সমুদ্রসীমা। সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগের মাধ্যমে এই সুযোগকে কাজে লাগানো সম্ভব।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, “বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত ভাগ্যবান, কারণ তাদের রয়েছে একটি বিশাল সমুদ্র, যা তাদের নানা দেশের সঙ্গে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়। আর ব্যবসা করার মাধ্যমে দেশের ভাগ্য পাল্টে যাবে।” বিশ্বের ৪৪টি দেশ ও পাঁচটি নির্ভরশীল অঞ্চল রয়েছে, যাদের কোনো সমুদ্রসীমা নেই। তবে বাংলাদেশ পেয়ে গেছে ১,১৮,৮১৩ বর্গ কিলোমিটার বিশাল সমুদ্রসীমা, যার মধ্যে রয়েছে ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত মহিষ পান। যদি এই বিশাল জলসীমা সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়, তবে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে, যা দেশের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করে দিতে পারে।
বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে উন্নত করার মাধ্যমে বাণিজ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপুল সুযোগ তৈরি হতে পারে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরকে অত্যাধুনিক করা হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হতে পারে। এর পাশাপাশি, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মাধ্যমে ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে বাংলাদেশ বৈশ্বিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। নিজের সমুদ্রসীমা ব্যবহারের মাধ্যমে শিপিং শিল্পকে সম্প্রসারিত করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কন্টেইনার জাহাজ পরিচালনা করা সম্ভব, যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় মাধ্যম হতে পারে।
বাংলাদেশের বিস্তৃত সমুদ্রসীমায় প্রচুর মৎস সম্পদ রয়েছে। যদি গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার প্রযুক্তি আরও উন্নত হয়, তবে রপ্তানি বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হতে পারে। তাছাড়া, বঙ্গোপসাগরের তলদেশে প্রচুর গ্যাস ও তেল রয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এই সম্পদগুলোর অনুসন্ধান করেছে। যদি সঠিকভাবে অনুসন্ধান ও উত্তোলন করা যায়, তবে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে স্বনির্ভরতা অর্জন সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের পর্যটন খাতের সম্ভাবনা বিশাল। কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন ও অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হলে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকৃষ্ট করা যাবে, যা বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ খুলে দিতে পারে। এক কথায়, বাংলাদেশের এই সমুদ্রসীমা ব্যবহার করে বাংলাদেশ শুধু এশিয়ার অন্যতম, বরং বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশ হয়ে উঠতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক পদক্ষেপ ও বাস্তবায়ন।
সূত্র: জনকণ্ঠ