ডাঃ মোঃ জাকারিয়া সিদ্দিকী
কিভাবে যৌনতাকে আরও উৎকর্ষতর করে তোলা যায়। মানুষ এর অনুসন্ধান শুরু করেছিল সেদিন হতে যে শুভ মুহূর্তটিতে তার মানব প্রেয়সীর সাথে যৌনতার শুভ সুযোগ এসেছিল। যৌনতার মত উপভোগ্য দ্বিতীয় আর কিছুই নেই। যৌনতার মাঝেই নাকি স্বর্গীয় সুধার দোয়া পাওয়া যায়। এ কারণে মানুষ যৌনতার প্রথম দিন হতে সে অমৃত উপাদানটির সন্ধান করেছে যা তার যৌনক্ষমতাকে আরও উৎকর্ষতর করে তুলবে যাতে সে অনেক বেশি তৃপ্তি নিয়ে যৌনতাকে উপভোগ করতে পারবে। সে যৌনতা বৃদ্ধিকারক অমৃত উপাদানটি কি? এ কৌতূহল সার্বজনীন!
এ নিয়ে নানান মুনির নানান মত। বাঘের দুধ বা গন্ডারের শিং হতে তৈরি পাউডার-এর মত দুষ্প্রাপ্য নমুনাও এসেছে এ অমৃতের সূত্র ধরে। এ অমৃত উপাদানটির যদি তালিকা তৈরি করা হয় তা কখনো শেষ করা যাবেনা। এ নানান উপাদানগুলো কি আসলেই যৌনতার উপর কোনো প্রভাব রেখে থাকে? আসলে এগুলো কাজ করে কিনা সে সম্পর্কে কোনো প্রকারের বিজ্ঞান গবেষণা চালানো হয়নি। সুতরাং আসল তথ্য সবার কাছে অজানা রয়ে গেছে। পুরো ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে স্রেফ অনুমান নির্ভর। যেমন- পুরুষাঙ্গের সাথে আকারগত সাদৃশ্যতা আছে বলে ধারণা করা হয়। কলা যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিকারক। খোঁজ নিলে আশেপাশে এ ধরনের হাজারো উদাহরণ পাবেন। সমস্যা হলো- মানব মনের দুর্বল দিক বাণিজ্যের কাছে পড়ে যায় বারংবার। যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর এ কথিত অমৃত উপাদানটিকে ঘিরে অস্পষ্টতা আর রহস্যময়তা আমাদেরকে প্রতিনিয়ত নানান প্রবঞ্চনা আর প্রতারণার ফাঁদে ফেলে দেয়। ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপনে পণ্যের যৌনতা উৎকর্ষতাকারক ক্ষমতার উদ্ধৃতি দেন প্রায়ই। দুর্বল মানব মন ক্রমশ এর দিকে ঝুঁকতে থাকে। ক্রমে ক্রমে অবস্থা এমন দাঁড়ায় প্রায় সব পণ্যরাই এ মহাগুণের অধিকারী হতে দেখা দেয়। এমন ঘটনা ঘটেছিল পাশ্চাত্যের মার্কিন বাজারে। ব্যাপারটা এতটা ব্যাপক রূপ নেয় যে, শেষ পর্যন্ত মার্কিন খাদ্য আর ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান এফ ডি এ (ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশান) কে এতে হস্তক্ষেপ করতে হয়। ১৯৯০ সালের ৬ জানুয়ারি এ প্রতিষ্ঠান ঘোষণা দেয় যে কোনো ধরনের পণ্য তা ওষুধ বা খাবার যেমনটিই হোক তাতে ‘যৌনতা উদ্দীপক’ বা ‘যৌনক্ষমতা বৃদ্ধিকারক’ এ জাতীয় কোনো মন্তব্য যেনো লেখা না থাকে। কর্তৃপক্ষের ভাষ্য হলো যৌনক্ষমতা সত্যিকারভাবে বাড়াতে পারে এ জাতীয় কোনো ওষুধ লোশন বা উপাদান এখনো তৈরি হয়নি।
আমরা এতদিন শুনে এসেছি আমাদের মনের যে যৌন শিহরণ বোধ তার মূল উৎস হল সেক্স হরমোন। পুরুষদের বেলাতে টেস্টোস্টেরন আর মহিলাদের বেলাতে এস্টোজেন প্রজেস্টেরন। পুরুষ আর মহিলাদের বেলাতে যথাক্রমে শুক্রাশয় আর ডিম্বাশয় এ সেক্স হরমোনের ক্ষরণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। এ সেক্স হরমোনের প্রভাবে বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীর দেহে সেকেন্ডারি সেক্স বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটে। যৌবনের বন্যা বয়ে যায়। এটি একদম স্বতঃসিদ্ধ।
সাম্প্রতিক গবেষকরা এর পাশাপাশি এক অভিনব নতুন তথ্য দিচ্ছেন। আমাদের মনের যৌনতাড়না বোধ বা লিবিডো এর মূল নিয়ামক হলো এ টেস্টোস্টেরন বা টেস্টোস্টেরনজাত ক্ষরণগুলো। শেষোক্তগুলোকে এন্ডোজেনও বলা হয়। এটি পুরুষ আর মহিলা দু’জনার বেলাতেই প্রযোজ্য। লিবিডো শব্দের পারিভাষিক অর্থ হলো যৌন কামনা বাসনা। মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড এ লিবিডোকে মানবের মূল চালিকা শক্তি বলে এমন অভিমতও করেছিলেন। পুরুষ দেহে না হয় শুক্রাশয় হতে ক্ষরিত হয়ে সহজাতভাবে বর্তমান থাকে এ টেস্টোস্টেরন। মহিলা দেহে টেস্টোস্টেরন বা এন্ড্রোজেন আসবে কোথা হতে? তাহলে মহিলাদের লিবিডো নিয়ন্ত্রিত হয় কিভাবে? গবেষকরা মহিলাদের রক্তস্রোতে সূক্ষ্ম মাত্রার এন্ড্রোজেনের উপস্থিতি দেখেছেন- এর মাত্রা পুরুষদের তুলনায় হাজার ভাগেরও কম। এত কম মাত্রার এন্ড্রোজেন কি শারীরবৃত্তীয় প্রভাব রাখতে পারে? অথচ পুরুষ আর নারীর লিবিডোর মাঝেতো বিস্তর ফারাক নেই। এতটা সূক্ষ্ম মাত্রার এন্ড্রোজেন নিয়ে মহিলারা পুরুষদের সমপর্যায়ের লিবিডোর অধিকারী হলো কিভাবে?
গবেষকরা এ প্রশ্নের জবাব দেন ভিন্ন আঙ্গিকে। গবেষকদের ব্যাখ্যা মহিলা দেহে ক্ষরিত টেস্টোস্টেরন আর এন্ড্রোজেন মাত্রা কম হতে পারে, কিন্তু মহিলা দেহ এর প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। একারণে সূক্ষ্ম মাত্রাও অনেক বেশি শারীরবৃত্তীয় প্রভাব তৈরি করে থাকে, মহিলা দেহের এড্রিনাল কটেক্স নামের হরমোন গ্রন্থি হতে এ এন্ড্রোজেন ক্ষরিত হয়। (পুরুষ আর মহিলা উভয়ের বেলাতে ডান বা বাম উভয় বৃক্কের উপরিভাগে এড্রিনাল কটেক্স হরমোন গ্রন্থি বিদ্যমান।) পাশাপাশি ডিম্বাশয় নিজেও সামান্য মাত্রার টেস্টোস্টেরন ক্ষরণ করে থাকে।
এ সাম্প্রতিক উদ্ভাবিত তথ্যের ব্যবহারিক প্রয়োগ হচ্ছে রজঃনিবৃত্তি পরবর্তী হরমোন থেরাপিতে। রজঃনিবৃত্তিকালে অনেক মহিলা যৌন ইচ্ছে কমে যাবার কথা বলে থাকেন। সাম্প্রতিককালে মহিলাদের রজঃনিবৃত্তিকালীন হরমোন থেরাপিতে ইস্ট্রোজেন আর প্রজেস্টেরন পাশাপাশি পুরুষ সেক্স হরমোন টেস্টোস্টেরন নেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে নাকি হরমোন থেরাপির উপযোগিতা অনেক বেশি বেড়ে যেতে দেখা গেছে।
অপরাধ জগত, কালোবাজার বা খুন রাহাজানির কোনো গোপন সপট এটি নয় অথবা নয়নাভিরাম সৌন্দর্যমন্ডিত কোনো পিকনিক স্পট এটি নয়। ডঃ লাডাস, ডঃ পেরি আর ডঃ ইতপলি নামের তিনজন গবেষক এ সপটকে বিশ্বজনতার কাছে পরিচিত করে তোলেন। নারী দেহ মানচিত্রে এর অবস্থান। অবশ্যই গোপনীয় কারণ গোপনাঙ্গে এর অবস্থিতি। কৌতূহল মানব মনে এ স্পটের আবিষ্কার তোলপাড় করে তোলে সারা বিশ্বজুড়ে। এ স্পটের নাম ‘জি স্পট’ সাংকেতিক নাম। গবেষক নারী যৌনাঙ্গের যোনি গাত্রে লুকানো অতিমাত্রায় সংবেদনশীল জায়গা খুঁজে পান। যখন যৌনাঙ্গের এ অংশটি উদ্দীপিত করা হয় তা নারীর মাঝে চরমপুলকের অনুভূতি আর শিহরণ জাগায়। গবেষকত্রয় এর অবস্থানের একদম সূক্ষ্ম হিসেব বাতলে দিয়েছেন-এটি যোনির অগ্রবর্তী গাত্রের মাঝে অবস্থান করে যা মুখ হতে পাঁচ সেঃমিঃ পরিমাণ ভেতরে থাকে। আকারে শিমের বিচির মত হলেও যৌন উত্তেজনায় এর আকার বেড়ে যায়। এ স্পটের আবিষ্কার এতদিনকার প্রচলিত নানা তত্ত্বকে পাল্টে দিয়েছে। অর্গাজমকে ঘিরে মনোগবেষক সিগমন্ড ফ্রয়েড দেয়া যে তত্ত্ব আলফ্রেড কিংসে পঞ্চাশের দশকে বাতিল করে দেন আশির দশকে এ জি সপট আবিষকার ফ্রয়েড তত্ত্বকে নতুন গ্রহণযোগ্যতা দান করেছে। এতো গেলো এক দিকের ব্যাপার। অপরদিকে যৌন সমীক্ষকদের মাঝেও এ নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। একদল তো এ সম্পর্কিত সপটের উপস্থিতিই মানতে রাজি নন। অন্যদের অভিমত নারী যৌনাঙ্গে এ জি স্পট থাকতে পারে কিন্তু সবার মাঝে নেই। এক গবেষক মাত্র দশ শতাংশ মহিলাদের বেলাতে এর উপস্থিতির কথা বলেছেন। অপর একদল বলেন প্রতি তিনজনে দু’জন মহিলার বেলাতে এর উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। গবেষকত্রয় এ নানান বিতর্ক সম্পর্কে অভিমত দেন ঠিক এভাবে কোনো নারীর যৌনাঙ্গে এর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গেলে প্রথমেই দেখতে হবে তার যৌন দৃষ্টিভঙ্গি আর যৌন সচেতনতা কেমন? এ কারণেই যতই দিন যাচ্ছে এ বিশেষ সপট অধিকারিনী নারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। এবার নামের রহস্য? এত নাম বাদ দিয়ে জি সপট নাম হলো কেনো? জি নামেরও রহস্য আছে কারণ গ্রাফেন বাজ নামের একজন ফরাশী গাইনোকলজিস্ট সর্বপ্রথম এর ধারণা দিয়েছিলেন। গ্রাফেনবাজ পুরুষ ছিলেন নারী নন।
পুরুষ আর নারীর পার্থক্য কেবলমাত্র লিঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়, তাদের স্টাইল, মনস্তত্ত্ব, আচার-আচরণ সব জায়গাতেই দেখা যায়। ভাষা হলো যোগাযোগের মাধ্যম। দাম্পত্য যোগাযোগ যত বেশি সাবলীল হবে, দাম্পত্য জীবন ততবেশি সুখের হবে। কিন্তু বাস্তবে পুরুষ আর নারী পরসপরকে কতটা বুঝতে পারেন? মনোগবেষকদের বক্তব্য হলো-পুরুষ আর নারীর ভাষা কিন্তু এক নয়। উভয়ের প্রকাশে একটা সুক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান। যদি দম্পতিরা ভাষার এসব সূক্ষ্ম পার্থক্য সম্পের্েক অবহিত থাকেন তাহলে দু’জনে পরসপরের আরও কাছাকাছি আসতে পারে। পুরুষ যখন স্ত্রীর রূপের প্রশংসা করে তখন ধরে নিতে হবে তাতে যৌনতার দুরভিসন্ধি মিশে আছে। এ ধরনের কিছু নমুনা নিচে দেয়া গেলো-
আমি তোমাকে ভালবাসি। (এর সত্যিকার অর্থ- চল সেক্স করা যাক) তোমাকে সত্যিই সুন্দর দেখাচ্ছে। (চল সেক্স করা যাক) টিভিতে যত মহিলা দেখানো হোক না কেন, তুমি এদের যে কারোর চেয়েও সুন্দরী। টিভিতে এসব অনুষ্ঠান দেখে লাভ কি! চল বিছানায় যাওয়া যাক। এগুলো পুরুষদের হিসেব। মহিলারা যখন ভালোবাসার কথা বলে তখন তার গূঢ় ভাবার্থ অনেক বেশি ভিন্ন। স্ত্রী যখন বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি এর মানে দাঁড়ায় স্বামীকে জিজ্ঞাসা করে নেয়া তুমি কি আমাকে ভালোবাস? যদি পুরুষ স্বামী এক্ষেত্রে তুমি আমার কাছে দেবীর মত, তুমিতো আমার স্বপ্নের নাযিকা এমন সব মন্তব্য ছুড়ে দেন তাহলে সহজেই স্ত্রীর অন্তরে গভীরতম স্থানটি ছুঁয়ে নিতে পারবেন।
পুরুষ আর নারীর ভাষার প্রকাশে এতটা বৈষম্য কেন? কারণ যৌন দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষরা যৌনতা আর সম্পর্কের ক্ষেত্রে দৈহিক ব্যাপারটাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। পুরুষরা যৌনতাকে রোমান্সের একটা অংশ মনে করে থাকে। মহিলারা রোমান্সকে যৌনতার একটা অংশ ধারণা করে থাকেন। আশা করি, দম্পতিরা পরসপরকে নতুনভাবে উপলব্ধি করবেন।
আমরা আমাদের হাত পা বা দেহের যে কোনো অংশ ইচ্ছামত নাড়াচাড়া করাতে পারি কিন্তু দেহের ঐ বিশেষ অঙ্গটার ওপর আমাদের সে ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। সামনে কোনো শিহরণ উদ্দীপক দেখলে তাতে সে সাড়া দিতেও পারে, নাও দিতে পারে। আদম যখন বেহেস্তে ছিলেন তখন নাকি এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ ছিল। বেহেস্তের সে নিষিদ্ধ ফল সেবন এ নিয়ন্ত্রণের মৃত্যু ঘটায়। এতে তাদের স্বর্গীয় বেশভূষা খসে পড়ে যায়। মহান প্রভু এ আদেশ লংঘনের কারণে তখন তাদের এ দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেন। সে অবধি মানুষের এ পার্থিক জীবন। সেন্ট অগাস্টিন গ্রন্থ ‘দি সিটি অব দি জয়’ গ্রন্থে এমনি এক অদ্ভুত তথ্যের অবতারণা করেছেন। এ সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি কি? আমরা আমাদের দেহের সমস্ত অংশকে যতটা স্বাচ্ছন্দ্যতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করে থাকি পুরুষাঙ্গের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই কেনো? নিজের খেয়াল খুশী মত মাথা তুলে তার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করে, আমরা ইচ্ছা শক্তি দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এটিকে উত্থিত বা শিথিল কোনোটাই করতে পারি না। আসলে শারীরবৃত্তিক এ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের বিশেষ কারসাজি। সবগুলো আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা, তবে স্নায়ুতন্ত্রের দুটো পৃথক বিভাগ এদের নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আমরা যে হাত পা বা অঙ্গ সঞ্চালন করে থাকি তা সোমাটিক স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এটি সম্পূর্ণভাবে আমাদের কৃতত্বাধীন। পুরুষাঙ্গের উদ্রিক্ততা বা শিথিলতা যে স্নায়ু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে তার নাম অটোনমিক স্নায়ুতন্ত্র। অটোনমিক মানে অটোমেটিক বা অটোনোমাস। দৈহিক শারীরবৃত্তি একটা স্বনিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ায় এটি করে থাকে। চেতন মন নয়,