আরও ২৫ হাজার টাকা। বিয়ে করতে গিয়ে ক্ষতির শিকার তিনি।
মোস্তাফিজুর জানান, তিনি বিবাহিত। তার স্ত্রী অসুস্থ। তাই তিনি দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবছিলেন। তামান্না আক্তারেরও বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় ১২ বছর আগে। ১৩ বছর বয়সী তার একটি মেয়ে আছে। বছর দুয়েক আগে পরিচয়ের পর তামান্নাকে তার ভালো লেগেছিল। এ জন্য তিনি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু তামান্না তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
মোস্তাফিজুর দাবি করেন, একবছর আগেই বিয়ের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি। তখন তামান্নাকে বিয়ের বাজার করতে এক লাখ টাকা দিয়েছিলেন। ওই সময় টাকা নেওয়ার পর বিয়ে করেননি তামান্না। এরপর বছরখানেক দুজনের কোনো যোগাযোগ ছিল না। কিছুদিন আগে আবার যোগাযোগ শুরু করেন তিনি। বিয়ে করবেন ভেবে তার মনও নরম হয়ে যায়।
তামান্না তাকে জানান, তিনি বিয়ে করবেন যদি তাকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ টাকায় তামান্না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজারে দোকান করতে চান। তামান্নার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান মোস্তাফিজুর। এরপর গত ২০ নভেম্বর রাতে তামান্না তাকে মেহেরচন্ডি এলাকার একটি কাজী অফিসে নিয়ে যান। সেখানে মোস্তাফিজুর নগদ ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। বিয়ের পর শহরের একটি তিন তারকা হোটেলে ফুলশয্যার কথা ছিল তাদের।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘বাড়িতে আমার অসুস্থ প্রথম স্ত্রী আছে। তাই ফুলশয্যাটা হোটেলে করতে চেয়েছিলাম। এ জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটি রুম বুক করি। কিন্তু হোটেলে ওঠার আগে তামান্না বলেন, তিনি এতগুলো টাকা দিয়ে হোটেলে উঠবেন না। টাকাটা বাড়িতে রেখে আসবেন। আমি তাতে সম্মতি দিই। তাকে বাড়ি পাঠিয়ে আমি অপেক্ষা করতে থাকি। কিন্তু তিনি আর আসেননি। অসংখ্যবার ফোন দিলেও আমার ফোন ধরেননি।’’
সম্প্রতি তামান্নার পাঠানো তালাকের নোটিশ হাতে পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তামান্না তালাকে সই করেছেন বিয়ের চার দিন পর, ২৪ নভেম্বর। মোস্তাফিজুর দাবি করেন, এখন তিনি শুনতে পাচ্ছেন যে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়া তামান্নার ব্যবসা। তিনি ইতোমধ্যে কয়েকজনের নাম জানতে পেরেছেন, যাদের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে শুধু তার বিষয়টিই বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়েছে।
তিনি জানান, প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি টাকা আদায়ে ওই নারীর এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জানান। তখন এলাকার লোকজন জানান, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এলাকার একজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছিলেন তামান্না। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই টাকার জন্য চাপে পড়েন তিনি। সম্প্রতি তামান্না ওই টাকা ফেরত দিয়েছেন। বিয়ে করে টাকা এনে তিনি ফেরত দিয়েছেন বলে এলাকার লোকজনের ধারণা।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘এমন প্রতারক মেয়ের সঙ্গে আমি আর সংসার করতে চাই না। আমি সরল মনে ৫৮ বছর বয়সে তাকে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সে জন্য ২৯ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছি।’’
যোগাযোগ করা হলে যুব মহিলা লীগ নেত্রী তামান্না আক্তার ফেন্সি বলেন, ‘‘বিয়ের পরই আমাকে দুই কাঠা জমি দেওয়ার কথা ছিল। ওই জমিতে একটি ফ্ল্যাটবাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ারও কথা ছিল। আর আমার ভবিষ্যতের জন্য ব্যাংকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার মৌখিক প্রতিশ্রুতি ছিল। এসবের কিছুই দেননি মোস্তাফিজুর। তিনি আমাকে বাড়িও নিয়ে যাবেন না। আমার মেয়ের দায়িত্ব নেবেন না। তাই তার সঙ্গে আমার সংসার করা সম্ভব হয়নি।’’
তিনি দাবি করেন, নিকাহনামায় নগদ মোহরানার ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা বুঝে পেয়েছেন বলে তিনি স্বাক্ষর দিলেও বাস্তবে টাকা পাননি। কাজী অফিস থেকে বেরিয়ে মোস্তাফিজুর টাকা দেননি। এখন তিনি গালগল্প সাজিয়ে বলছেন। তামান্না বলেন, ‘‘আমি পালিয়ে যাইনি। অফিস করছি। আমি যুব মহিলা লীগকে সমর্থন করতাম। তবে কোনো পদে ছিলাম না।’’