ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের কাছে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ। তাকে ফেরত আনতে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভারত যদি এক্ষেত্রে প্রত্যর্পণ বিষয়ক চুক্তির রাজনৈতিক ধারা ব্যবহার করে তাহলে আমাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক তৈরি করবে না। দ্য হিন্দুকে দেয়া দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে তার কোনো আপত্তি নেই। বিএনপি চায় নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ অবশ্যই থাকতে হবে। এর মধ্যদিয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি তার রায় দিয়ে দিয়েছে। ড. ইউনূস বলেন, একটি বড় দলের মতামতকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। সাক্ষাৎকারে তিনি ভারত-বাংলাদেশ প্রসঙ্গ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক সহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছেন। দাবি তুলেছেন সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার। বলেছেন, তিনি স্বপ্ন দেখেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মতো একটি ইউনিয়নের। ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে ঢাকার যমুনায় তার সরকারি বাসভবনে ওই সাক্ষাৎকার দেন। এ সময় তিনি বলেন, ১০০ দিনে তিনি অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করেছেন। অন্যদিকে হিন্দুদের ওপর হামলার বিষয়টিকে প্রপাগান্ডা বা অপপ্রচার বলে অভিহিত করেন। এই সাক্ষাৎকারে তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ভারতীয় ওই সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর একজন দক্ষ এবং দূরদর্শীর মতো দিয়েছেন ড. ইউনূস। যেসব প্রশ্নে তার উত্তেজিত হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক ছিল, তার উত্তর দিয়েছেন অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায়। কখনো কখনো ওই সাংবাদিককে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। দ্য হিন্দুর পক্ষে সাক্ষাৎকারটি নেন সাংবাদিক সুহাসিনী হায়দার। এখানে প্রশ্নোত্তর আকারে তা তুলে ধরা হলো-
বিনিয়োগে আরও সহযোগিতা ও অনেক কিছুর আশ্বাস দিয়েছে। আমি যখন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়েছি তখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট সহ অনেক দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তারা আর্থিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমাদের এমন কর্মকর্তারা আছেন, যারা বিনিয়োগকারীদের সমস্যাকে সমাধানে প্রস্তুত, যাতে তারা বাংলাদেশের ব্যুরোক্রেটিক জটিলতায় না পড়েন। সেটা হলো ওয়ান-স্টপ সার্ভিস, যেখানে আপনি সমস্যা সমাধান করতে পারবেন। ফলে আমি বলবো, দেশ খুবই ইতিবাচক পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
কমিশনের কাছে ফিরে যেতে হবে।
প্রশ্ন: এতে কি কয়েক বছর সময় লাগবে?
উত্তর: আমার কোনো ধারণা নেই। জনগণ একটি নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা এগিয়ে যাবো।
প্রশ্ন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুমতি দেয়া হবে কিনা?
উত্তর: এরই মধ্যে এ ঘোষণা হয়ে গেছে। রাজনৈতিক দলের বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি। বিএনপি সেটা করেছে। তারা বলেছে, নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ অবশ্যই থাকতে হবে। সুতরাং তারা এরই মধ্যে রায় দিয়ে দিয়েছেন। দেশের একটি বড় দলের মতামতকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না।
প্রশ্ন: তাহলে আওয়ামী লীগের (নির্বাচনে) অংশগ্রহণ নিয়ে আপনার কোনো আপত্তি নেই?
উত্তর: আমি কোনো রাজনীতিক নই যে, একটি পার্টি বা অন্য আরেকটি পার্টিকে বেছে নেবো। আমি শুধু রাজনীতিবিদদের ইচ্ছা পূরণ করছি।
প্রশ্ন: কয়েক বছর আগে (২০০৭ সালে) আপনি নিজের একটি দল চালু করার চেষ্টা করেছিলেন।
উত্তর: ওটা ছিল মাত্র ১০ সপ্তাহের। তারপর আমি সংবাদ সম্মেলন করেছি এবং সব বন্ধ করে দিয়েছি। অনেক মানুষ আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, জনগণের জন্য একটি পরিবর্তন প্রয়োজন। এমনকি আমরা পার্টির নামও দিয়েছিলাম এবং এ পর্যন্তই। তার পর থেকে বাকি জীবনভর একটি রাজনৈতিক দল করার জন্য আমাকে অভিযোগ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনি নিজেকে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখেন না?
উত্তর: আমি নিজেকে কখনোই একজন রাজনীতিক হিসেবে দেখি না।